কিছুক্ষন আগে বিবিসি বাংলার একটা ফেসবুক পোস্ট দেখলাম । এটি একটি ছবি, যার ক্যাপশনে লেখা- "মঙ্গলবার ঝুম বৃষ্টির মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে এক কিশোরী" । ছবিটিতে মেয়েটির চেহারা স্পষ্ট বুঝা না গেলেও, এতটুকু বুঝা যাচ্ছে যে ঝুম বৃষ্টি পড়ছে আর মেয়েটি রেইনকোট পরে- সাইকেল চালিয়ে- বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কোথাও যাচ্ছে । মেয়েটি কি ঘুরতে বেরিয়েছে, নাকি কোন কাজে বেরিয়েছে তা এই ছবিতে স্পষ্ট নয় ।
ছবিটির লিঙ্ক (যদি এরই মধ্য ডিলিট না করে থাকে) |
পোস্টটিতে ক্লিক করে কমেন্ট বক্স স্ক্রল করতে করতে আমি হতবাক হয়ে গেলাম । যখন দেখলাম একজন ব্যক্তি কমেন্ট করেছে, "এদের কে কুকুরে খাবে না তো কে খাবে" । আবার আরেকজন দেখলাম আরো একধাপ এগিয়ে কমেন্ট করলো, "ঐ জন্যই তো ওখানে ভুমিকম্প হয়" ।
তখন মনে পড়লো পাকিস্তানের একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের প্রধান (আমি বুঝলাম না, সবাই তাকে "ধর্মীয় গুরু" বলছে কেন!) মাওলানা ফজলুর রেহমান নাকি কিছুদিন আগে "ভুমিকম্পের একমাত্র কারন" হিসেবে "মেয়েদের জিন্স পড়া"-কে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন । এই বক্তব্যের প্রভাব যে এতো তারাতাড়ি এদেশে আমদানী হয়ে যাবে, তা কখনো ভাবিনি ।
ঐ পাকিস্তানী ফজলুর রেহমান পাকিস্তানে বসে বক্তব্য দিয়েছে ঠিকই । কিন্তু এদিকে বাংলাদেশী জাকারিয়া ইসলাম বাংলাদেশে বসে তা শুনেছে, বিশ্বাস করেছে এবং ফেসবুক কমেন্টে তার 'প্রয়োগ' ঘটিয়েছে ।
এভাবে স্ক্রল করতে করতে আবিষ্কার করি, এই সমাজ 'নারীর ক্ষমতায়ন', 'নারী উন্নয়ন' কিংবা 'কর্মক্ষেত্রে নারী' নিয়ে যতই লাফ-ঝাঁপ করুক না কেন... 'মানসিক দাসত্ব' থেকে পুরুষ কখনো নারীকে মুক্তি দেবে না । ঐ ছবিতে কেউ বলছে, "দেশে নারী স্বাধীনতা দিন দিন বাড়ছে, রেপও দিন দিন বাড়ছে... এমন নারী স্বাধীনতা আমরা চাই না" । কেউ বলছে," এরাই তো ধর্ষনের শিকার হয়... একটু বাছ-বিচার করে চলা উচিত" । আবার কেউ বলছে, "রেপড এরা হবে না তো কি পাড়ার জরিনা হবে? তেল কত!" ।
এসব দেখে আমি এই ছবিটি দেখার পর আমার প্রথম অনুভূতি মনে করার চেষ্টা করলাম । কমেন্ট বক্স খোলার আগে ছবিটি দেখে আমি আমার কলেজ জীবনে ফিরে গিয়েছিলাম । ভাবছিলাম কুকুর-বেড়াল বৃষ্টির কথা, রেইনকোট পড়ে ভিজে ভিজে সাইকেল চালানোর কথা । উফফ... ভাবতেই গায়ে শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন