সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রহস্যময় রাস্তা | যে পথ আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে উপরের দিকে | গ্র্যাভিটি রোডস (Gravity Roads)





এটা আমরা মোটামুটি সবাই জানি যে, অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে আমাদের সবাইকে টানছে । এই বলের প্রভাবে সব বস্তুই উপর থেকে ভূপৃষ্টের দিকে পড়ে । এই বলের প্রভাবেই পানি নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে, উপরের দিকে একটা ক্রিকেট বল ছুঁড়ে দিলে তা নিচে ফিরে আসে ।
দক্ষিন অস্ট্রেলিয়ার একটি 'গ্র্যাভিটি হিল' । ছবি - উইকিপিডিয়া ।

কিন্তু সারা বিশ্বের নানা প্রান্তে এমন কিছু রাস্তা আছে যেখানে আপনার গাড়ি 'নিউট্রাল' এ রাখলেও আপাতদৃষ্টিতে নিচের দিকে গড়িয়ে না গিয়ে বরংচ উপরের দিকে উঠে আসে। এসব রাস্তাগুলোতে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে দিলেও আপনার মনে হবে তা নিজে নিজেই উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। একই ঘটনা ঘটে যখন ওখানে পানি ঢালা হয় কিংবা বল রাখা হয়। আগেই জানিয়ে রাখি, আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটি ভুতূরে মনে হলেও এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।

ছবি - উইকিপিডিয়া
"গ্র্যাভিটি হিলস" বা "গ্র্যাভিটি রোডস" নামের এরকম অদ্ভুতূরে রাস্তা সারা বিশ্বের প্রায় শত শত জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই রাস্তাগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায় । কারো মতে এসব রাস্তায় জীন-ভূতের আনাগোনা আছে, আবার কারো ধারনা "ম্যাগনেটিক" বা চৌম্বকীয় বলের কারনে গাড়িগুলো উপরের দিকে যেতে থাকে । প্রায় এক দশক ধরে এই রাস্তাগুলো পর্যটক এবং সাধারন মানুষের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে ।



আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় এইসব জায়গায় পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে । কিন্তু আসলে এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে । এই 'নিচ থেকে উপরে যাওয়া'র ঘটনাটি আসলে একটি দৃষ্টিভ্রম ।


উপরের ছবিটি দেখুন । সাইকেল চালানো ব্যক্তিটি A অবস্থান থেকে B অবস্থানে যাচ্ছে । তার দৃষ্টিতে A অবস্থান থেকে B অবস্থানের উচ্চতা বেশী ।


কিন্তু সামগ্রিক ভূ-অবস্থান থেকে দেখলে A স্থানটি B থেকে উপরে । অর্থাৎ, সাইকেল চালানো ব্যক্তিটি আসলে ঢালুর উপর থেকে নিচের দিকে যাচ্ছে । যদিও তার কাছে ব্যাপারটি উল্টো মনে হচ্ছে । তাই যেকোন ব্যক্তি আপাতদৃষ্টিতে দেখে ভাবে যে, কোন এক অদৃশ্য বলের প্রভাবে সে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে । আরেকটি উদাহরন দিলে ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে ।


উপরের ছবিটি স্কটল্যান্ডের একটি রাস্তার দৃশ্য । ছবিটি দেখলে বুঝা যায়, রাস্তার তীর চিহ্ন দেয়া স্থানটি বাকি অংশ থেকে অপেক্ষাকৃত উচু । কিন্তু রাস্তাটির সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা পরিমাপ করে দেখা যায় রাস্তার ঐ অংশটি কম উচ্চতায় (২৯২ ফুট) এবং ডান পাশের ঢালু অংশটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশি উচ্চতায় (৩০৩ ফুট) অবস্থান করছে ।


অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এমন অনেক 'গ্র্যাভিটি হিল' বা 'গ্র্যাভিটি রোড' রয়েছে । এসম্পর্কে উইকিপিডিয়ায় একটা লিস্ট রয়েছে । আশা করি ভবিষ্যতে এমন কোন জায়গায় ভ্রমনের সময় ব্যাপারটিকে আর ভুতের কান্ড বলে মনে হবে না ।

নিচের এই ভিডিওটি দেখুন ।



পরিশিষ্টঃ কিছুদিন আগে আমার একজন বন্ধু পাশে বসে ইউটিউবে ভিডিও দেখছিলো । যার শিরোনাম ছিলো "সৌদি আরবের মদিনায় রহস্যময় জীনের পাহাড় সবকিছুকে টানছে সেই দিকে! ভিডিওসহ PAPERS24 NET PAPERS" । ভিডিওটি দেখে কৌতুহলবশত এর পিছনে বৈজ্ঞানিক কারন খোঁজার চেষ্টা করছিলাম । যা পেয়েছি তাই এই পোস্টে সংকলন করার চেষ্টা করলাম । আর পোস্টের এমন শিরোনাম দৃষ্টি আকর্ষনের জন্যে দেয়া হলেও, ব্যাপারটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের মত হয়ে গেছে । আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।

তথ্যসূত্রঃ
  • https://en.wikipedia.org/wiki/Gravity_hill
  • https://sites.google.com/site/mysterysynthesisjamiemosher/gravity-hill-legends
  • http://paranormal.about.com/od/earthmysteries/a/tales_09_01_22t.htm
  • https://youtu.be/to9cvh8N7G4?list=PLplw3vmlgfZMOU2VEekxed0qPfpq4WyYu
  • http://io9.gizmodo.com/5931477/how-do-mystery-spots-or-gravity-hills-work

মন্তব্যসমূহ

Most Popular Posts

জাপানের আত্মহত্যার বন | ভয়ংকর সুন্দর - যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১০০টি মৃতদেহ পাওয়া যায়

জাপানের আওকিগাহারা বন (Aokigahara) মৃত্যূর জন্য একেবারে নির্জনতম স্থান । জাপানের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট ফুজির পাদদেশে অবস্থিত এই বনটি পুরো এলাকার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর জায়গা । কিন্তু, এই বনের গাছ-গাছালি এতই ঘন যে খুব সহজেই আপনি এখানে হারিয়ে যেতে পারবেন । প্রতি বছর এখানকার কর্তৃপক্ষ প্রায় ১০০টি মৃতদেহ উদ্ধার করে, আর বাকি মৃতদেহগুলো অনাবিষ্কৃত থেকে যায় বছরের পর বছর । ঠিক কি কারনে মানুষ আত্মহত্যার জন্য এই বন বেছে নেয় তা এখনো রহস্যের মতো । ধারনা করা হয় যে, কোন এক উপন্যাসের নায়ক প্রথম এই বনকে বেছে নেয় আত্মহত্যার জন্যে । উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এই বন আত্মহত্যার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে ।

বাংলাদেশী লজিক : "কাপড় ঠিক নাই? তাইলে ঐ মাইয়ারে ধর্ষন কর" - ১ (এক)

কিছুক্ষন আগে বিবিসি বাংলার একটা ফেসবুক পোস্ট দেখলাম । এটি একটি ছবি, যার ক্যাপশনে লেখা- "মঙ্গলবার ঝুম বৃষ্টির মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে এক কিশোরী" । ছবিটিতে মেয়েটির চেহারা স্পষ্ট বুঝা না গেলেও, এতটুকু বুঝা যাচ্ছে যে ঝুম বৃষ্টি পড়ছে আর মেয়েটি রেইনকোট পরে- সাইকেল চালিয়ে- বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কোথাও যাচ্ছে । মেয়েটি কি ঘুরতে বেরিয়েছে, নাকি কোন কাজে বেরিয়েছে তা এই ছবিতে স্পষ্ট নয় । ছবিটির লিঙ্ক (যদি এরই মধ্য ডিলিট না করে থাকে) পোস্টটিতে ক্লিক করে কমেন্ট বক্স স্ক্রল করতে করতে আমি হতবাক হয়ে গেলাম । যখন দেখলাম একজন ব্যক্তি কমেন্ট করেছে, "এদের কে কুকুরে খাবে না তো কে খাবে" । আবার আরেকজন দেখলাম আরো একধাপ এগিয়ে কমেন্ট করলো, "ঐ জন্যই তো ওখানে ভুমিকম্প হয়" । তখন মনে পড়লো পাকিস্তানের একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের প্রধান (আমি বুঝলাম না, সবাই তাকে "ধর্মীয় গুরু" বলছে কেন!) মাওলানা ফজলুর রেহমান নাকি কিছুদিন আগে "ভুমিকম্পের একমাত্র কারন" হিসেবে "মেয়েদের জিন্স পড়া"-কে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন । এই বক্তব্যে...