সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলাদেশের রগরগে শিরোনামের অনলাইন নিউজ এবং আপনার একটি ক্লিকের অপেক্ষা





আমি অবাক হয়ে যাই যখন দেখি বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ "ফেসবুকিং" বোঝে, কিন্তু "গুগলিং" বোঝে না!

আমি আরো অবাক হয়ে যাই, যখন দেখি "নিউজ সার্চ" করতে বললে কেউ কেউ আবার ফেসবুকে লগ-ইন করে "নিউজ" দেখে!

একদিন ইউটিউবে সার্চ দিলাম "তালাশ" লিখে... "সার্চ" করার পর আসা "রেসাল্ট" থেকে একটা ভিডিও ক্লিক করলাম । ঐ ভিডিও দেখতে দেখতে পাশের "সিমিলার রেজাল্ট" গুলোতে চোখ বুলালাম ।

এরমধ্যে কয়েকটা শিরোনাম হলো-

- এখন নায়িকা হ্যাপি ক্রিকেটার রুবেল হসাইনের সম্পর্কে বোমা ফাটালো
- কলেজেপরুয়া মেয়ে ঘরে থাকতে কাজের ছেলে রাখার ফল
- স্বামী বিদেশে তাই প্রাইভেট টিচার এর সাথে অশ্লীল সম্পর্ক
- পাগল শালীর সাথে নষ্টামি
- রাতে ঢাকা শহরের দেহ ব্যাবসার রমরমা চিত্র দেখুন ইত্যাদি ইত্যাদি...
উপরের সবগুলো ভিডিওই "ক্রাইম প্রোগ্রাম" । কিন্তু এগুলা টিভির চেয়ে ইউটিউবেই বেশি জনপ্রিয় । "কামোদ্দীপক" এমন সব শিরোনাম এখন শুধু ইউটিউব কিংবা এসব ভিডিওতে সীমাবদ্ধ নাই । ওদের "কালো হাত" ছড়িয়ে পড়েছে তথাকথিত অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতেও । এসব নিউজ পোর্টালগুলোতে শিরোনামগুলো এতটাই "লোমহর্ষক" এবং "লোভনীয়" যে, যেকোন স্বাভাবিক স্বভাবের মানুষই ক্লিক করে ঐ নিউজ পড়তে বাধ্য ।

শুরুতে বলছিলাম এদেশের মানুষের "ফেসবুকিং" বোঝার কথা । কিন্তু আমাদের বাংলাভাষী মানুষ কতটা ফেসবুকিং বোঝে তা নিয়ে আমার যথেষ্ট "মতবিরোধ" আছে । তা না হলে "সময়ের কন্ঠস্বর", "RadioMunna.com", "RadioShongi.com" এর মতো "ভুয়া" ফেসবুক পেইজভিত্তিক নিউজপোর্টাল এবং bd24live.com, atnlive.com এর মতো "অশ্লীল" ও "চটি" গল্পের "নিউজ পোর্টাল" গুলো ফেসবুক থেকে ক্লিক কামিয়ে ওয়েবসাইটের ট্রাফিক এতো বাড়াতে পারতো না ।

হাল আমলে কিছু কিছু "প্রতিষ্টিত" সংবাদ মাধ্যমগুলোর "অনলাইন ভার্সন" গুলোরও দেখি একই অবস্থা! যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, জাতীয় দৈনিক "কালেরকন্ঠ" পত্রিকার অনলাইন ভার্সন ।‪ ‎কালেরকন্ঠ‬ কিভাবে শিরোনামগুলোকে "আরো লোভনীয়" করে তার উদাহরন যারা দেখতে চান, তারা নিচের ছবিগুলো দেখতে পারেন ।























বাংলাদেশে আজকাল ব্যাঙের ছাতার থেকেও সহস্রগুন হারে অনলাইন (বেশীরভাগই ফেসবুকভিত্তিক) মিডিয়া গড়ে উঠতেছে । আজকে "অমুক নগ্ন হলেন" তো কালকে "তমুক পর্ন সিনেমা বানাচ্ছেন" টাইপের শিরোনাম দিয়ে পোস্ট করা হচ্ছে নিউজ । ফেসবুকের পোস্ট অ্যাডভার্টাইজিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন এসব পোস্ট আমার-আপনার নিউজ ফিডে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ভাইরাসের মতো করে । আসল কথা হলো, পাবলিক এগুলো খাচ্ছে!



এদের কাজ হলো, ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ানো । এর জন্য বিভিন্ন ডিভাইস (মোবাইল কিংবা কম্পিউটার) থেকে এইসব ওয়েবসাইটে ক্লিক পাওয়াই হচ্ছে ওদের মূল লক্ষ্য । এর পিছনে অর্থের পাশাপাশি সামাজিক, এমনকি রাজনৈতিক ফায়দারও একটা ব্যাপার-স্যাপার আছে । যাক ঐসব বিস্তারিত বর্ণনায় না গিয়ে আগে এই স্ক্রিনশটগুলো দেখুন ।

খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এইসব অনলাইন নিউজ-মিডিয়ার কোন অফিস নেই, কোন সাংবাদিক নেই, কোন ফটোগ্রাফার নেই; নিজের বাসায় বসে গুগল আর নিজের গোবরসমৃদ্ধ মস্তিষ্ক ব্যবহার করে এরা একের পর এক সেনসেশনাল নিউজ তৈরী করে যাচ্ছে, আর পাবলিক এই টোপগুলো গিলছে, শেয়ার করে আরেকজনকেও গেলাচ্ছে । যত প্রাপ্তবয়স্ক পোস্ট, ফ্যান পেইজে তত লাইক, তত কমেন্ট... এইটা সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকবে, এইটা বুঝতে আইনস্টাইন হতে হয় না ।


আগে বলা হতো, শোনা কথায় কান দিতে নেই । আর এখন দেখতেছি, সবসময় পড়া কথাও বিশ্বাস করতে নেই । নিউজমিডিয়ার "দ্বায়বদ্ধতা" বলতে একটা কথা আছে । এইটা বেশীরভাগ অনলাইন পত্রিকার মধ্যেই অনুপস্থিত ।

এসব নিয়ে "ম্যাঙ্গো স্কোয়াড" একটি "রিপোর্ট" বানিয়েছে । যারা এসব "অনলাইন নিউজ পোর্টাল" গুলোর "ভয়াবহতা" সম্পর্কে আরো জানতে চান, তাদেরকে ইউটিউবে এই ভিডিওটি  দেখার অনুরোধ করছি । ভিডিওটিতে এসব "নিউজ পোর্টাল" এর এডমিনদেরকে এককথায় "জুতার বাড়ি" দেয়া হয়েছে...

এদেশের মানুষের "গুগলিং" এর বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার । সেগুলো আরেকদিন লেখতে হবে । আপাতত আজকের এই "কামোদ্দীপক", "লোমহর্ষক" লেখার এখানেই সমাপ্তি ।
(চলবে...)
[ফেসবুক পোস্ট থেকে]

মন্তব্যসমূহ

Most Popular Posts

জাপানের আত্মহত্যার বন | ভয়ংকর সুন্দর - যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১০০টি মৃতদেহ পাওয়া যায়

জাপানের আওকিগাহারা বন (Aokigahara) মৃত্যূর জন্য একেবারে নির্জনতম স্থান । জাপানের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট ফুজির পাদদেশে অবস্থিত এই বনটি পুরো এলাকার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর জায়গা । কিন্তু, এই বনের গাছ-গাছালি এতই ঘন যে খুব সহজেই আপনি এখানে হারিয়ে যেতে পারবেন । প্রতি বছর এখানকার কর্তৃপক্ষ প্রায় ১০০টি মৃতদেহ উদ্ধার করে, আর বাকি মৃতদেহগুলো অনাবিষ্কৃত থেকে যায় বছরের পর বছর । ঠিক কি কারনে মানুষ আত্মহত্যার জন্য এই বন বেছে নেয় তা এখনো রহস্যের মতো । ধারনা করা হয় যে, কোন এক উপন্যাসের নায়ক প্রথম এই বনকে বেছে নেয় আত্মহত্যার জন্যে । উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এই বন আত্মহত্যার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে ।

বাংলাদেশী লজিক : "কাপড় ঠিক নাই? তাইলে ঐ মাইয়ারে ধর্ষন কর" - ১ (এক)

কিছুক্ষন আগে বিবিসি বাংলার একটা ফেসবুক পোস্ট দেখলাম । এটি একটি ছবি, যার ক্যাপশনে লেখা- "মঙ্গলবার ঝুম বৃষ্টির মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে এক কিশোরী" । ছবিটিতে মেয়েটির চেহারা স্পষ্ট বুঝা না গেলেও, এতটুকু বুঝা যাচ্ছে যে ঝুম বৃষ্টি পড়ছে আর মেয়েটি রেইনকোট পরে- সাইকেল চালিয়ে- বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কোথাও যাচ্ছে । মেয়েটি কি ঘুরতে বেরিয়েছে, নাকি কোন কাজে বেরিয়েছে তা এই ছবিতে স্পষ্ট নয় । ছবিটির লিঙ্ক (যদি এরই মধ্য ডিলিট না করে থাকে) পোস্টটিতে ক্লিক করে কমেন্ট বক্স স্ক্রল করতে করতে আমি হতবাক হয়ে গেলাম । যখন দেখলাম একজন ব্যক্তি কমেন্ট করেছে, "এদের কে কুকুরে খাবে না তো কে খাবে" । আবার আরেকজন দেখলাম আরো একধাপ এগিয়ে কমেন্ট করলো, "ঐ জন্যই তো ওখানে ভুমিকম্প হয়" । তখন মনে পড়লো পাকিস্তানের একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের প্রধান (আমি বুঝলাম না, সবাই তাকে "ধর্মীয় গুরু" বলছে কেন!) মাওলানা ফজলুর রেহমান নাকি কিছুদিন আগে "ভুমিকম্পের একমাত্র কারন" হিসেবে "মেয়েদের জিন্স পড়া"-কে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন । এই বক্তব্যে...

রহস্যময় রাস্তা | যে পথ আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে উপরের দিকে | গ্র্যাভিটি রোডস (Gravity Roads)

এটা আমরা মোটামুটি সবাই জানি যে, অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে আমাদের সবাইকে টানছে । এই বলের প্রভাবে সব বস্তুই উপর থেকে ভূপৃষ্টের দিকে পড়ে । এই বলের প্রভাবেই পানি নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে, উপরের দিকে একটা ক্রিকেট বল ছুঁড়ে দিলে তা নিচে ফিরে আসে । দক্ষিন অস্ট্রেলিয়ার একটি 'গ্র্যাভিটি হিল' । ছবি - উইকিপিডিয়া ।